নারিকেল অর্থকরী ফল ও তেলজাতীয়
ফসল। খাদ্য বা পানীয় হিসেবে আমরা নারিকেলের যে শাঁস ব্যবহার করি তা পুরো নারিকেলের
৩৫ শতাংশ মাত্র। বাকি ৬৫ শতাংশ হলো খোসা ও মালা। নারিকেলের মালা দিয়ে বোতাম, অ্যাক্টিভেটেট
কাঠ কয়লা, বাটি, খেলনা, কুটির শিল্প, চামচ ও খোসা থেকে আঁশ এবং আঁশজাত
দ্রব্য যেমন- দড়ি, মাদুর এসব তৈরি হয়। দড়ি তৈরি করার সময়
খোসা থেকে যে তুষ বের হয় তা পচিয়ে উৎকৃষ্ট জৈবসার তৈরি করা যায়। যশোর ও বাগেরহাট অঞ্চলে নারিকেল খোসার আঁশ ব্লিচিংয়ের মাধ্যমে সাদা করে বিদেশে রফতানি করা হয়। তাছাড়া গ্লিসারিন, সাবান ও কেশ তেল
তৈরিতে নারিকেল ব্যবহৃত হয়। ইদানিং গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে ভোজ্যতেল হিসেবেও
নারিকেল তেল উৎকৃষ্ট। নারিকেলের চোবড়ার ঝুরা দিয়ে উৎকৃষ্ট মানের বীজ চারা উৎপাদন মিডিয়া হিসেবে নার্সারির বেডে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে খাদ্য ও শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে প্রায় ৩৫ কোটি নারিকেল চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দেশে প্রায় ১০
কোটি নারিকেল উৎপাদিত হয়। অর্থাৎ মাত্র ৩ ভাগের ১ ভাগ চাহিদা মিটানো যায়। শ্রীলঙ্কায় যেখানে বছরে মাথাপিছু নারিকেলের ব্যবহার ১৪০টি সেখানে বাংলাদেশে ব্যবহার হয় ১টি নারিকেল।
পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে স্বাভাবিক
অবস্থায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন
নারিকেল উৎপাদন হয়। মোট উৎপাদনের ৪০ শতাংশ নারিকেল ডাব হিসেবে ব্যবহার করা হয়, ৪৫ শতাংশ ঝুনা
নারিকেল হিসেবে খাওয়া হয়, ৯ শতাংশ দিয়ে তেল তৈরি হয় এবং অবশিষ্ট
৬ শতাংশ হতে চারা করা হয়। সারা বিশ্বে নারিকেল উৎপাদন হয় তেল তৈরির জন্য আর বাংলাদেশে নারিকেল চাষ হয় ফল ও পানীয় হিসেবে ব্যবহারের জন্য। পানীয় বা শাঁস যেভাবেই ব্যবহার করা হোক না কেন তাতে নারকেলের মাত্র ৩৫ শতাংশ ব্যবহার হয়ে থাকে; বাকি ৬৫ শতাংশ মালা, ছোবড়া ও পানি
সমন্বয়ে গঠিত যা অব্যবহৃতই থেকে যায়। প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে এর খোসা, মালা ও পানি থেকে অতিরিক্ত ৫-১০ গুণ বেশি উপার্জন করা সম্ভব। নারিকেল থেকে
তুলনামূলকভাবে কম উপার্জন হলেও তা সারা বছরব্যাপী হয়। নারিকেলের শাঁস ও ডাবের
পানিতে বিভিন্ন প্রকার খনিজ পদার্থ ও প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-ই
ও ফ্যাটি এসিড আছে যা শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে ও রোগ জীবাণু থেকে সুরক্ষা
দেয়। তাই জাতীয় জীবনে পুষ্টি চাহিদা পূরণে নারিকেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
থাকে। বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানেও নারিকেল ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে নারিকেল বেশি উৎপাদিত হয়।
বিশেষ করে খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর,
বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর,
পটুয়াখালী, বরগুনা, মাদারীপুর,
শরিয়তপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর,
ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার।
কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত উপকূলীয় দ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে
বিশাল নারিকেল বাগান। যে কারণে দ্বীপটির স্থানীয় জনপ্রিয় নাম হলো নারিকেল
জিঞ্জিরা। উপকূলীয় অঞ্চলে এ রকম আরও বাগান প্রতিষ্ঠা করে দেশে নারিকেল উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০ মিটার উচ্চতায় নারিকেল জন্মানো যায় অনায়াসে। এছাড়াও রামুতে বীজ তৈরির উদ্দেশ্যে পাহড়ের কোল ঘেঁসে গড়ে তোলা হয়েছে ২৫০ হেক্টর এলাকায় বিশাল
বাগান। নারিকেল পারিপার্শ্বিক আবহাওয়ার প্রতি খুবই সংবেদনশীল। তাই এলাকভিত্তিক জাত
নির্বাচন করে রোপণের জন্য যথাযথ মানের বীজ সংগ্রহ করা ভালো। যে এলাকাতে নারিকেল
গাছের সংখ্যা বেশি সে এলাকায় নারিকেল গাছে ফলও ধরে বেশি। নারিকেলের ফলন, শাঁসের গুণাবলি
ও বীজ নারিকেলের মান পরাগায়ন দ্বারা প্রভাবিত হয়।
একই ধরনের যত্ন নেয়া সত্ত্বেও কোনো গাছে খুব দেরিতে ফল আসে আবার
কোনো গাছে তাড়াতাড়ি ফল আসে। আবার কোনো কোনো গাছে বছরে ৩০ থেকে ৪০টি আবার কোনো গাছে
১০০টির বেশি নারিকেল জন্মে। ইদানিং খাটো জাতের নারিকেল আবাদ শুরু হয়েছে। এসব জাতে
৩ বছরের মধ্যেই নারিকেল ধরে এবং প্রতি বছর ২০০ থেকে
২৫০টি নারিকেল ধরে। এজন্য মানসম্মত বীজমাতা নির্বাচন করা দরকার। বীজমাতা নির্বাচনে
যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে যেখানে একসাথে অনেক গাছ থাকে সেখান থেকে বীজমাতা
নির্বাচন করতে হয়। বছরে ১০০টির বেশি নারিকেল উৎপন্ন করার ক্ষমতা এবং ৩০
উত্তর সমূহ